- বাদশাহ নামদার, আপনার সাথে দেখা করতে চাওয়ার একটাই কারণ তা হলো, আমার কাছে এমন একটা গাছের বীজ আছে যে গাছটা মনের সব আশা পূরণ করতে পারে। আমি আপনার জন্য এই গাছটা রোপণ করে দিয়ে যেতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী তাকে জিজ্ঞেস করল 'তোমার চারা লাগাতে কত দিন লাগবে?'
চোর উত্তর দিল, 'এইতো স্যার, সাত দিন। 'সাতদিন পর তাকে আবার মন্ত্রিসভায় হাজির করা হল।
একজন জিজ্ঞেস করল, 'তোমার চারার কী খবর?'
চোর বলল, 'আসলে জমি তো রেডি কিন্তু বীজটা পরিপক্ক হতে আরও তিনদিন লাগবে।'
তিনদিন পর তাকে আবার হাজির করা হল।
প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন, 'বীজ রেডি তো এবার?'
চোর বলল, 'স্যার জমি বীজ সবই রেডি কিন্তু আমিতো তা রোপণ করতে পারব না।'
প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন, 'কেন?'
চোর বলল, 'এটা এমন একজনের হাতে রোপণ করতে হবে যে কোনদিন চুরি করেনি। তা নাহলে এটা কার্যকারিতা হারাবে।'
সাথে সাথে প্রধানমন্ত্রী অর্থমন্ত্রীকে নির্দেশ দিলেন বীজ রোপন করতে।।অর্থমন্ত্রী কাচুমাচু হয়ে বললেন,
- 'জাঁহাপনা সারা দেশের অর্থ নিয়ে আমার কাজ। এত কাজের মধ্যে দু'একটা তো এদিক সেদিক হতেই পারে।'
এরপর প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিলেন পরিবহনমন্ত্রীকে।
পরিবহনমন্ত্রী কাচুমাচু হয়ে বললেন,
- 'জাঁহাপনা, এত-এত গাড়িঘোড়া আমার প্রতিনিয়ত অনুমোদন দিতে হয়, এর মাঝে তো দু'একটা এদিক সেদিক হতেই পারে।'
এরপর প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীও কাচুমাচু হয়ে বললেন,
- 'জাঁহাপনা, এতো দেশের সাথে যোগাযোগ, এতো দেশে যাওয়া আসা, বাণিজ্য লেনদেন এর মধ্যে তো আমারও দু'একটা এদিক সেদিক হতেই পারে।'
প্রধানমন্ত্রী এরপর যাকেই বলেন, সেই এদিক সেদিকের দোহাই দিয়ে এড়িয়ে যায়। হঠাৎ সবাই প্রধানমন্ত্রীকে ধরলেন, 'বাদশাহ নামদার, আপনিই রোপণ করুন না।'
তখন প্রধানমন্ত্রী বললেন, 'তোমাদের তো দায়িত্ব ছোট ছোট, আমি পুরো দেশ চালাই। আমার কি একটু আকটু এদিক সেদিক হতে পারে না?!'
তখন সবাই চুপ হয়ে গেল। হঠাৎ একজন বলে উঠলেন, 'তাহলে জাঁহাপনা, এই লোক তো সামান্য একটা ম্যানহোলের ঢাকনা চোর। একে মৃত্যুদন্ড দেয়া কি ঠিক? একে ছেড়ে দেয়া হোক। তন্মধ্যেই আরেকজন বলে উঠলেন, 'না একে ছেড়ে দেয়া যাবে না। তাহলে সে বাইরে গিয়ে আমাদের চুরির ব্যপারে সব ফাস করে দেবে।'
মন্ত্রি সভায় পিন-পতন নীরবতা ছেয়ে গেল, আসলেইতো কথা ঠিক, একে নিয়ে কী করা যায়? তখন একজন বলল,-
- 'জাঁহাপনা এক কাজ করুন। একে আমাদের মতোই একটা পদ দিয়ে আমাদের সাথে সামিল করে নেন।'
যেই ভাবা সেই কাজ, সেই চোর হয়ে গেল মন্ত্রীসভার সদস্য। এভাবেই মন্ত্রী সভা গঠিত হচ্ছে আমাদের৷
সারকথাঃ দেশের ৯৮% প্রতিষ্ঠানে এভাবেই দুর্নীতিবাজরা একতাবদ্ধভাবে অনিয়ম অব্যবস্থাপনার কাজ করে পার পাচ্ছে।ব্যতিক্রম কেউ থাকলে তার উপর চলে অত্যাচার - যুলুম - নির্যাতন - নিপীড়ন।
কুরানের আয়াত ও হাদীস দিয়ে শেষ করছি।
3:192
رَبَّنَاۤ اِنَّکَ مَنۡ تُدۡخِلِ النَّارَ فَقَدۡ اَخۡزَیۡتَہٗ ؕ وَ مَا لِلظّٰلِمِیۡنَ مِنۡ اَنۡصَارٍ ﴿۱۹۲﴾
আর জালেমদের কোন সাহায্যকারী থাকবে না।”
১. وَ سَیَعۡلَمُ الَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡۤا اَیَّ مُنۡقَلَبٍ یَّنۡقَلِبُوۡنَ
‘আর অত্যাচারীরা অচিরেই জানতে পারবে, তাদের গন্তব্যস্থল কোথায়?’ (সুরা আশ-শুআরা : আয়াত ২২৭)
আয়াতে ‘তাদের গন্তব্যস্থল কোথায়?’ এর মর্মার্থ হলো- জাহান্নাম। এখানে পাপীদের জন্য রয়েছে কঠিন সতর্কবাণী। হাদিসে পাকেও এ সতর্কবাণী এসেছে এভাবে-‘অত্যাচার করা থেকে দূরে থাকো! কারণ অত্যাচার কেয়ামতের দিন অন্ধকারের কারণ হবে।’ (মুসলিম)
হা/১