উম্মাহ নিউজ টুয়েন্টিফোর

মাওলানা মুমতাজুল কারীম বাবা হুজুর রহ: এর জিবনী

মাওলানা মুমতাজুল কারিম বাবা হুজুর  ১৯৪২ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুমিল্লা জেলার সদর  থানার ডুলিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

মাওলানা মুমতাজুল কারিম নিজ এলাকার বিখ্যাত বটগ্রাম হামিদিয়া মাদরাসায় শিক্ষাজীবন শুরু করেন। এরপর ফেনী শর্শদি মাদরাসায় কিছুদিন পড়াশোনা করে দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসায় ভর্তি হয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন । পরে জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়া মাদরাসা থেকে সুনাম ও কৃতিত্বের সঙ্গে দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করেন। দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের নিমিত্তে ১৯৬৩ সালে পাকিস্তান গমন করেন। পাকিস্তানের বিখ্যাত মাদরাসা জামিয়া আশরাফিয়া লাহোর থেকে তাফসির ও আদব (আরবি সাহিত্য) বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন।

১৯৬৫ সালে দেশে ফিরে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার কাতলাসেন কাদেরিয়া কামিল মাদরাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে যোগ দেন। তবে বেশিদিন সেখানে ছিলেন না। ওই বছরই (১৯৬৫) বরিশালের ঐতিহ্যবাহী চরমোনাই মাদরাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে যোগ দেন এবং মুসলিম শরিফের দরস দেওয়া শুরু করেন। 

পরবর্তীতে ঢাকা আশরাফুল উলুম বড়কাটারা মাদরাসায় সাত বছর মুহাদ্দিস হিসেবে খেদমত করে চট্টগ্রামের পটিয়া মাদরাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে নিয়োগ পান। পটিয়া মাদরাসায় তিনি টানা সাত বছর সুনামের সঙ্গে হাদিসের দরস দেন। এ সময় পটিয়া থেকে প্রকাশিত ‘মাসিক আত তাওহীদ’ পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকার আগারগাঁওয়ে অবস্থিত জামিয়া হোসাইনিয়ার প্রতিষ্ঠাতাও তিনি।

১৯৮৪ সালে দেশের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারীতে নিয়োগ পান। হাটহাজারী মাদরাসায় অত্যন্ত সুনাম-সুখ্যাতির সঙ্গে হাদিসের দরস দিতে থাকেন। হাটহাজারী মাদরাসায় অধ্যাপনাকালে শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের মাঝে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। শিক্ষার্থীদের প্রতি তার অপরিসীম দরদ, ছাত্রগড়ার প্রতি তার মেহনত থেকে ছাত্ররা তাকে ‘বাবা হুজুর’ বলে সম্বোধন করতে থাকে। তিনিও দেশব্যাপী ‘বাবা হুজুর’ নামে পরিচিতি পান। একজন শিক্ষকের জন্য এর চেয়ে পরম পাওয়া আর কী আছে? ১৯৮৪ সাল থেকে টানা ৩৫ বছর (২০১৯ পর্যন্ত) তিনি হাটহাজারী মাদরাসায় হাদিসের দরস দিয়েছেন। এরপরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে ঢাকায় তার ছেলে মাওলানা মাহমুদুল হাসান মোমতাজীর কাছেই থাকছেন।

এখন অসুস্থতার জন্য দরস দিতে না পারলেও উস্তাদ হিসেবে তার নাম রয়েছে। 

কথায় আছে, রতনে রতন চেনে। চরমোনাই মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের কিছুদিনের মধ্যেই মরহুম চরমোনাই পীর মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ ইসহাক রহমাতুল্লাহি আলাইহি  মাওলানা মুমতাজুল কারিমকে অত্যাধিক স্নেহ ও ভালোবাসার পাত্রে পরিণত করে মেয়ে হুরুননেছা বেগমকে তার সঙ্গে বিয়ে দেন। দীর্ঘ ৩০ বছর সংসার জীবন শেষে বাবা হুজুরের প্রিয়তমা স্ত্রী ১৯৯৫ সাল ৯ মে (হজের দিন) ইন্তেকাল করেন। পরে ১৯৯৬ সালে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। 

দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জনক বাবা হুজুর। তার বড় ছেলে মাওলানা মাহমুদুল হাসান মুমতাজী দেশবিখ্যাত আলেম। তিনি তেজগাঁও রহিম মেটাল জামে মসজিদের খতিব, ইন্টারন্যাশনাল খতমে নবুওয়ত মুভমেন্ট বাংলাদেশের আমির ও ইসলামিক কালচারাল ফোরামের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। 

বাবা হুজুর রহ. ছিলেন দিলখোলা মানুষ। ছিলেন আপোষহীন। স্পষ্টভাষী। সাহসী ও উদ্যমী। ছাত্রদের জন্য হাত ছিল উন্মুক্ত। সবর্দা হাদিয়া দিতেন তিনি। ছাত্রদের ছেলের মত আদর করতেন। বাবা ডাকলে খুশি হতেন। নাস্তা করাতেন। পাগড়ি পরে থাকতেন সর্বদা। কথা কম বলতেন, তবে যা বলতেন তা ছিল ঘণ্টা বয়ানের চেয়েও উপযোগী। 

ইসলামের প্রচার-প্রসার, কোরআনের তাফসির, ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদসহ নানা দ্বীনি কাজে তিনি দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়িয়েছেন। অংশ নিয়েছেন সভা-সমিতি, ওয়াজ মাহফিল, জনসভা ও ইসলামি সম্মেলনে। একাধিক দেশও ভ্রমণ করেছেন। তন্মধ্যে তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, আমেরিকা, চীন, হংকং, কুয়েত, কাতার, বাহারাইন, সৌদি আরব, পাকিস্তান ও ভারত অন্যতম। 

শুধু হাদিসের খেদমত ও ওয়াজ মাহফিল নয় লেখালেখিতেও মাওলানা মুমতাজুল কারিমের অবদান রয়েছে। সুলুক ও তাসাউফের মেহনতও তিনি করেছেন। হাকিমুল ইসলাম মাওলানা কারী তৈয়ব রহমাতুল্লাহি আলাইহির নিকট বায়াত হন। পরবর্তীতে পীরে কামেল মাওলানা মুহাম্মাদ কামরুজ্জামান এলাহাবাদী (বখশিবাজারী) তাকে চিঠির মাধ্যমে চার তরিকায় খেলাফত প্রদান এবং বায়াত করার অনুমতি দেন। এছাড়া দারুল মাআরিফ চট্টগ্রামের শায়খুল হাদিস সন্দ্বীপের পীর সাহেব হজরত মাওলানা এহসানুল হক রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাকে লিখিতভাবে খেলাফত দেন এবং খানকায়ে এহসানিয়া প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেন। ২০১৭ সালে মাহবুবুল উলামা হজরত মাওলানা পীর জুলফিকার আহমদ নকশবন্দী মুজাদ্দেদিও তাকে খেলাফত প্রদান করেন। বাবা হুজুর মালয়েশিয়ার হলুলাংগাত মিফতাহুল উলুম মাদরাসা মিলনায়তনে আয়োজিত শায়খ নকশবন্দীর ইসলাহি মুলতাকায় যোগ দিয়ে ১০ মিনিটের মতো আলোচনা করেন। তার আলোচনায় মুগ্ধ হয়ে পীর নকশবন্দী তাকে খেলাফত দেন।

তার রচিত গ্রন্থাবলীর অন্যতম হলো- আরবি বোখারি শরিফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ বাদয়ুল কারি ইলা দিরাসাতিল বোখারি, বোখারি শরিফের উর্দূ ব্যাখ্যাগ্রন্থ হাবিবুল বারী শরহিল বোখারি, আরবি কাওয়ায়েদে ফিকহিল হানাফি, তারিখুত তাফসির, কোরআন-হাদিসের অমূল্য রত্ন, পরকালে মুক্তি কিসে (অনুবাদ), উলুমুল কোরআন, এসো কোরআনের অর্থ শিখি, আকিদায়ে খতমে নবুওয়ত, রায়বেন্ডের দশদিন (অনুবাদ) ও আল্লাহকে পাওয়ার রাস্তা। এছাড়া বিভিন্ন মাসিক পত্রিকা, স্মরণিকা ও স্মারকগ্রন্থে তার অনেক লেখা প্রকাশ পেয়েছে। 

মাওলানা মুমতাজুল কারিম বাবা হুজুরের শিক্ষকদের অন্যতম হলেন- বাংলাদেশের মীর সাহেব হুজুরখ্যাত শায়খুল উলুম ওয়াল মানাতিক, রঈসুল মুহাদ্দিসিন আল্লামা আমীর হোসাইন (রহ.), শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.), আল্লামা আনওয়ারুল আজীম (রহ.), শায়খুল হাদিস মাওলানা নুরুল ইসলাম শর্শদীর হুজুর (রহ.), পাকিস্তানের শায়খুত তাফসির ওয়াল ফুনুন আল্লামা ইদরীস কান্ধলভী (রহ.), শায়খুল হাদিস আল্লামা মুহাম্মদ সরফরাজ খান (রহ.), উস্তাজুল কুল, শায়খুল মাশায়েখ আল্লামা রাসূল খান (রহ.) ও শায়খুল ফালসাফা মাওলানা গোলাম গাওছ হাজরাভী (রহ.)। 

বাবা হুজুর বাংলদেশের সদর সাহেব হুজুরখ্যাত মোজাহেদে আজম আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী রহমাতুল্লাহি আলাইহির সান্নিধ্যও পেয়েছেন। ১৯৬৭ সালের দিকে তিনি গওহরডাঙ্গা মাদরাসায় গেলে সদর সাহেব হুজুর তাকে সাথে করে নিয়ে পুরো মাদরাসা ঘুরিয়ে দেখান এবং ছাত্রদের দরস দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। সমকালীন সময়ে বাংলাদেশের বড় বড় আলেমদের সান্নিধ্য তিনি পেয়েছেন। তিনি নিবিড়ভাবে যাদের সান্নিধ্য পেয়েছেন তাদের অন্যতম হলেন- পটিয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মুফতি আজিজুল হক (রহ.), মোহাদ্দিস সাহেব হুজুর (রহ.) ও শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক (রহ.)। 

মাওলানা মুমতাজুল কারিম বাবা হুজুর একজন আশেকে কোরআন ও আশেকে কোরআনে হাফেজ। তার দুই ছেলেই হাফেজে কোরআন। সামাজিক মানুষ হিসেবে তার বিশেষ খ্যাতি রয়েছে। সীমাহীন পরোপকারী, লেনদেনে অসম্ভব ধরনের স্বচ্ছতা তার জীবনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তিনি কাউকে কোনো বিষয়ের ওয়াদা দিলে তা পূরণ করতেন। এ জন্য তাকে শতভাগ ওয়াদা পূরণকারী ব্যক্তিত্ব বলা হয়। ওয়াদা খেলাফকারীদের তিনি ভীষণ অপছন্দ করেন। দেশের আনাচে-কানাচে তার যেমন অনেক ছাত্র রয়েছে, তেমনি সরকারি উচ্চমহলে বাবা হুজুরের অনেক ভক্ত রয়েছে। তারা বাবা হুজুরকে প্রাণাধিক ভালোবাসেন, সম্মান করেন।

স্বাভাবিক গড়নের ফর্সা চেহারার অধিকারী বাবা হুজুর খুব কম আহার করেন। তবে লাউ, ছোট মাছ তার পছন্দের খাবার। এছাড়া খুরমা ও কাজুবাদাম খেতে তিনি ভালোবাসেন।

তথ্য: ইন্টারনেট।

হা/১ 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন
উম্মাহ নিউজ টুয়েন্টিফোর
উম্মাহ নিউজ টুয়েন্টিফোর
উম্মাহ নিউজ টুয়েন্টিফোর